বদ্ধ

ইতিহাস

হাজার বছর আগে রাঙ্গামাটি আরাকানের মগ রাজত্বের রাজধানী ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ঝুজারোফা মগ বংশকে পরাজিত করেন এবং রাঙ্গামাটি দখল করেন। তিনি ৫৯০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি উদয়পুরে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে রাজার সেনাপতি ছিলেন গোপী প্রসাদ। তিনি রাজা অনন্ত মানিক্যকে হত্যা করেন এবং ত্রিপুরার রাজা হন। গোপীনাথ তাঁর নাম বদলে উদয় মানিক্য নামে ভূষিত হয়েছিলেন।ঐ সময় তিনি রাজধানীর নামও রাঙ্গামাটি থেকে বদলে উদয়পুর করেছিলেন। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ কৃষ্ণ মানিক্য রাজধানী উদয়পুর থেকে পুরাতন আগরতলায় স্থানান্তরিত করেন .পুরাতন আগরতলা পুরাণ হাভেলি নামেও পরিচিত। উদয়পুর ১১৭০ বছর ধরে ত্রিপুরার রাজধানী ছিল। রাজা ঝুজারোফা ছিলেন উদয়পুরে রাজত্বকালের প্রথম রাজা এবং কৃষ্ণ মানিক্য ছিলেন শেষ রাজা । উদয়পুর হল ত্রিপুরার প্রাচীনতম রাজধানী। মোট ৫৯ জন রাজা ত্রিপুরার রাঙ্গামাটি বা উদয়পুর থেকে শাসন করেছেন। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে , মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য, রাজ্যের দক্ষিণ অংশ দিয়ে উদয়পুর বিভাগ তৈরি করেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে উদয়পুর বিভাগের অফিসটি জগন্নাথ দিঘির উত্তর পারে রাজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম পাবলিক লাইব্রেরি উদয়পুরে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। উদয়পুর রাজ্যের একটি বিখ্যাত শহর। এটি একটি ঐতিহাসিক শহর। শহরটি তার মন্দির, হ্রদ এবং পুরনো প্রাসাদের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পুরনো ভগ্ন রাজপ্রাসাদ উদয়পুর শহর থেকে মাত্র .৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ত্রিপুরা ভারতীয় অঞ্চলে যোগ দেয় এবং উদয়পুর একটি উপ-বিভাগ হয়। ১ লা সেপ্টেম্বর, ১৯৭০ সালে, উদয়পুর দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সদর দপ্তর হয়। ১৯৯৬ সালে রাজ্য সরকার উদয়পুরকে ত্রিপুরার পর্যটন রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করে। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে অবিচ্ছিন্ন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা দুটি নতুন জেলা যেমন- গোমতী জেলা ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় বিভক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সদর দপ্তর হল বিলোনিয়া শহর এবং গোমতী জেলার সদর দপ্তর উদয়পুর। উদয়পুরের পর্যটন আকর্ষণে ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, ভুবনেশ্বরী মন্দির, গুনবতী মন্দির, শিব মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, গোপীনাথ মন্দির, বদরসাহেব বারী, প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান  হিন্দু ও মুসলমানদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি সাক্ষী হিসাবে রয়েছে। এ ছাড়াও অমরসাগর, জগন্নাথ দিঘি, ধনিসগর (ধনানয় সাগর) ও মহাদেব দিঘি (বিজয় সাগর) এর মতো হ্রদগুলি শহরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। টেপানিয়া ইকো পার্ক, সৎসঙ্গ আশ্রম, রাম ঠাকুর আশ্রম, রামকৃষ্ণ আশ্রম, অযাচক আশ্রম, লোকনাথ আশ্রম ও টাউন মসজিদ মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। উদয়পুর এখন ত্রিপুরার রাজধানী নাও হতে পারে কিন্তু রাজ্যের রাজধানী থেকে এটি কম নয়।